ফিটকিরির ৪০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা - ফিটকিরির সংকেত
পেজসূচিপত্রঃ ফিটকিরির ৪০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
ফিটকিরির ৪০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
- পানিশোধনে ব্যবহৃত হয়ঃ আমরা কম বেশি সবাই জানি ফিটকিরি পানির ময়লা এবং জীবাণু দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- রক্ত বন্ধে সহায়কঃ আপনার যেকোন কাটা বা ক্ষতস্থানে ফিটকিরি ব্যবহার করে দেখুন সাথে সাথে রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে।
- গলার খুসখুসে দূর করেঃ ফিটকিরির ৪০ টি উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে এটি হল অন্যতম। গলার খুসখুশি দূর করার জন্য ফিটকিরির সাথে গরম পানি মিশ্রিত করে দিনে দুইবার মিশ্রিত পানি দিয়ে গড় গড় করুন।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যাদের মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ বের হয় তাদের জন্য হতে পারে ফিটকিরি মহা ঔষধ। এর জন্য ফিটকিরির পানি দিয়ে প্রতিদিন কুলি করতে হবে।
- ত্বকের ফুসকুড়ি দূর করেঃ বিভিন্ন রিসার্চের মাধ্যমে জানা গেছে ফিটকিরিতে রয়েছে অ্যান্টিসেপ্টিক যা ত্বকের ফুসকুড়ি দূর করতে সাহায্য করে।
- দাঁতের সমস্যা নিরসনঃ আপনি যদি দাঁত মজবুত রাখতে চান তাহলে নিয়মিত ফিটকিরি এবং লবণের মিশ্রণ তৈরি করে নিয়মিত দাঁত মাজতে পারেন এতে করে দাঁতের মাড়ি শক্ত হতে সাহায্য করবে।
- দ্রুত ঘা সারায়ঃ আপনার শরীরের যেকোন কাটা ফাটা স্থানে ফিটকিরি ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ঘা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- বগলের দুর্গন্ধ দূর করেঃ ফিটকিরির প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট হিসেবে বগলের দুর্গন্ধ দূর করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- ফাঙ্গাল সংক্রমণ প্রতিরোধ করেঃ বিশেষজ্ঞদের মতে ফিটকিরি এন্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে। সেই জন্য ত্বকের ফাংগাল সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ফিটকিরি বেশ কার্যকরী।
- মুখের ব্রণ কমায়ঃ মুখের ব্রণ দূর করার জন্য ফিটকিরির গুড়া পানিতে মিশিয়ে ব্রনের উপর লাগালে দ্রুত ব্রণ শুকাতে সাহায্য করে।
- অ্যাথলেট ফুটের চিকিৎসাঃ ফিটকিরির ৪০ টি উপকারিতা ও অপকারিতার আরেকটি হলো, ফিটকিরি ফাংগাল ইনফেকশনের জন্য কার্যকর হওয়ায় অ্যাথলেট ফুট রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
- শেভ করার পর ব্যবহার করা যায়ঃ সেভ করার পর অনেক সময় মুখ জ্বালাপোড়া করে।এই জ্বালাপোড়া তাৎক্ষণিক ভাবে বন্ধ করার জন্য ফিটকিরি ব্যবহার করা হয়।
- চুল পড়া কমায়ঃ যাদের মাথায় অতিরিক্ত চুল পড়তে দেখা যায় তারা চাইলে ফিটকিরির পানি দিয়ে চুল ধৌত করতে পারেন। এতে চুল পড়া আস্তে আস্তে কমতে শুরু করবে।
- ডায়রিয়া নিরাময়ঃ ডায়রিয়া নিরাময় করার জন্য ফিটকিরি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার করতে দেখা যায়।
- মুখের বলিরেখা দূর করেঃ নিয়মিত ফিটকিরি ব্যবহার করলে মুখের বলিরেখা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ ফিটকিরিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের বলিরেখা দূর করার পাশাপাশি ত্বক টানটান করে তোলে।
- দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করেঃ দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করার জন্য ফিটকিরি ও লবণের মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
- ঘামাচি দূর করেঃ ফিটকিরির গুঁড়া ঘামাচি স্থানে প্রয়োগ করলে রাতা রাতি ঘামাচি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ত্বকের দাগ দূর করেঃ ত্বকের যে কোনো দাগ নিরাময় করার জন্য ফিটকিরির ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ফিটকিরিতে রয়েছে অ্যান্টিসেপ্টিক বৈশিষ্ট্য যা ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।
- ফেসিয়াল হেয়ার রিমুভ করতে ব্যবহৃত হয়ঃ মেয়েদের মুখের অবাঞ্ছিত লোম খুব সহজেই রিমুভ করা যায় ফিটকিরি মিশ্রিত পানি দ্বারা।
- কোল্ড সোর প্রতিরোধ করেঃ ঠোঁট ফাটা বা ঠোঁটের ফোলা ভাব দূর করার জন্য ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন।
- কিডনির পাথর দূর করেঃ ফিটকিরি কিডনির ছোট পাথর গলাতে অত্যন্ত কার্যকরী। তাই আপনার কিডনিতে যদি ছোট ছোট পাথর হয়ে থাকে তাহলে ফিটকিরির পানি মিশ্রিত করে সেবন করতে পারেন।
- পেটের গ্যাস কমায়ঃ গ্যাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ফিটকিরি দুর্দান্ত কাজ করে থাকে। তাই আপনি চাইলে পেটের গ্যাস কমানোর জন্য ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন।
- কানের ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরঃ ফিটকিরি এবং সরিষার তেলের মিশ্রণ কানের ব্যথা দূর করে। তাই কানের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ফিটকিরি এবং সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন।
- মহিলাদের সাদা স্রাব প্রতিরোধ করেঃ চিকিৎসকেরা বলেন ফিটকিরি সাদাস্রাব সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- অ্যাজমার জন্য উপকারীঃ প্রাচীন যুগে শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার সমস্যায় ফিটকিরি ব্যবহার করা হতো।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেঃ ফিটকিরি নিয়মিত ব্যবহারে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করেঃ ফিটকিরি রক্তপাত বন্ধ করতে সক্ষম, বিশেষ করে ছোটখাটো কাটা বা আঘাতে ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন।
- মুখের ফোলা কমায়ঃ ফিটকিরির অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য মুখের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
- পোকামাকড়ের কামড় থেকে মুক্তি দেয়ঃ ফিটকিরি পোকামাকড়ের কামড় থেকে সৃষ্ট জ্বালা এবং ব্যথা কমায় খুব দ্রুত।
- ত্বকের র্যাশ দূর করেঃ ফিটকিরি ত্বকের র্যাশ বা অ্যালার্জি কমাতে সহায়ক। তাই আপনার ত্বকে যদি অ্যালার্জি থাকে তাহলে ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন।
- মাথার ময়লা দূর করেঃ যাদের মাথায় প্রচুর উকুন বা ময়লা দেখা যায় তারা চাইলে ফিটকিরির পানি দিয়ে মাথা দূয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার মাথায় উকুন বা ময়লা থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন।
- জীবাণুমুক্ত রান্নাঘরঃ আমরা সবাই চাই রান্নাঘর জীবাণুমুক্ত রাখতে। তাই আপনিও যদি রান্নাঘর জীবাণুমুক্ত রাখতে চান তাহলে গরম পানিতে একটুকরো ফিটকিরি দিয়ে সেই পানি দিয়ে রান্নাঘর পরিষ্কার করতে পারেন।
- আঙুলে ঘা হওয়াঃ হাত বা পায়ের আঙুলে পানি ঝমে থাকার কারণে অনেক সময় ঘা হয়ে যায়। আপনি যদি সেই ঘা স্থানে ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন তাহলে সাথে সাথে ঘা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ফিটকিরি কি চুলের জন্য ক্ষতিকর
- চুল শুষ্ক করে তুলতে পারেঃ আপনি যদি ফিটকিরি নিয়মিত এবং অতিরিক্ত ব্যবহার করা শুরু করেন তাহলে আপনার চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।
- চুল ভাঙা বা দুর্বল হতে পারেঃ অতিরিক্ত ফিটকিরি ব্যবহার করলে চুল ভেঙে যাওয়া বা দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি চুলের নরমতা নষ্ট করে এবং চুল ভঙ্গুর করে তোলে।
- ত্বকের জ্বালা সৃষ্টি করতে পারেঃ চুলের গোড়ায় অতিরিক্ত ফিটকিরি ব্যবহার করলে স্ক্যাল্পে জ্বালাপোড়া বা অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বকে এর প্রভাব বেশি হতে পারে।
- চুল পড়ার ঝুঁকিঃ অতিরিক্ত শুষ্কতা এবং ত্বকের জ্বালার কারণে চুল পড়ার সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ফিটকিরির রাসায়নিক নাম ও সংকেত
KAl(SO₄)₂·12H₂O
এটি একটি ডাবল সালফেট লবণ, যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে অ্যালুমিনিয়াম এবং পটাশিয়াম আয়ন তৈরি করে।
ফিটকিরির রাসায়নিক গঠন বোঝাতে কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণঃ
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়
- K = পটাশিয়াম (Potassium)
- Al = অ্যালুমিনিয়াম (Aluminum)
- SO₄ = সালফেট আয়ন (Sulfate Ion)
- 12H₂O = ১২টি জলের অণু (Water of crystallization), যা এটিকে ক্রিস্টালাইন আকার দেয়।
ফিটকিরি দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
কেন ফিটকিরি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে?
ফিটকিরি মূলত অ্যালুমিনিয়াম সলফেটের প্রাকৃতিক একটি মিশ্রণ যা অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে, ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার করতে এবং ব্রণের প্রদাহ কমাতে এটি দারুণ কাজ করে। ত্বকে জমে থাকা অতিরিক্ত তেল কমিয়ে এটি লোমকূপ বন্ধ করতে সাহায্য করে, যার ফলে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
ফিটকিরি দিয়ে ব্রণ দূর করার সহজ উপায়সমূহ
১. ফিটকিরি
২. ফিটকিরি এবং মুলতানি মাটি
৩. ফিটকিরি ও পানির মিশ্রণ
ফিটকিরি সাধারণ একটি মিশ্রণ ত্বকের ব্রণ দূর করতে বেশ কার্যকরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেই কার্যকরী মিশ্রণটি তৈরি করার জন্য ১/২ চা চামচ ফিটকিরির গুঁড়া এবং ২ টেবিল চামচ পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে এটি ত্বকের ব্রণের ওপর লাগাতে হবে। এরপর ১০-১৫ মিনিট রেখে তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৪. ফিটকিরি ও গোলাপজল মিশ্রণ
ফিটকিরি ও গোলাপজল একসঙ্গে ব্যবহার করলে ব্রণের দাগ ও লালচেভাব কমাতে সাহায্য করে। তার জন্য ১/২ চা চামচ ফিটকিরির গুঁড়া এবং ১ টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকের ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ত্বককে সতেজ রাখে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
৫. ফিটকিরি ও মধু মিশ্রণ
মধু প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ফিটকিরির সাথে মিশে ত্বকের লালচেভাব কমায় ও ত্বককে কোমল রাখে। এর জন্য ১/২ চা চামচ ফিটকিরির গুঁড়া এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ত্বকের ব্রণের উপর লাগান। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
মারিয়া অনলাইন ব্লকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url