কি খাওয়ালে মুরগির ওজন বাড়ে - মুরগির ওজন বৃদ্ধির সেরা উপায়

 আপনি যদি দেশি মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে মনোযোগ দিয়ে পড়া শুরু করি আর্টিকেলের ভিতরে যাওয়ার আগে চলুন জেনে নেই এই পোস্টটিতে কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কি খাওয়ালে মুরগির ওজন বাড়ে, মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত,কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি,

কি খাওয়ালে মুরগির ওজন বাড়ে

সূচিপত্রঃ কি খাওয়ালে মুরগির ওজন বাড়ে

১০০ দেশি মুরগি পালনে খরচ, ১০০ দেশি মুরগি পালনের কত লাভ, কম খরচে মুরগির ঘর নির্মানণ, মুরগির বাচ্চা পালনের নিয়ম, দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা এই সমস্ত পয়েন্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি এই সমস্ত পয়েন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে চান তাহলে এই পুরো পোস্টটি আপনাকে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।

কি খাওয়ালে মুরগির ওজন বাড়ে

দেশি মুরগির মাংস খেতে আমরা সবাই পছন্দ করি কিন্তু চাহিদার সাথে আমরা উৎপাদন করতে পারি না। দেশি মুরগির মাংসের যেমন চাহিদা রয়েছে তেমনি ডিমেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখন আপনাদের জানাবো কিভাবে অল্প দিনে দেশি মুরগির মাংস বৃদ্ধি করবেন। সচরাচর দেখা যায় ধান, চাউল, ভুট্টার গুরা, ভুষি, ভাত এই সমস্ত খাবার খেতে দেওয়া হয়।

কিন্তু আপনি যদি অল্প দিনে ওজন বাড়াতে চান তাহলে মুরগিকে খাদ্য খাওয়াতে হবে। দুই সপ্তাহ স্টাটার ক্যাটাগরির খাদ্য এবং তৃতীয় সপ্তহে থেকে গ্রোয়ার ক্যাটাগরির খাদ্য খাওয়াতে হবে। তাহলে আপনার মুরগি 5 মাসের ভেতর 800 থেকে 1000 গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়ে যাবে।

মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত

বাংলাদেশে মানুষের জনসংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে সেই সাথে মুরগির মাংসের চাহিদা ও দিন দিন বাড়ছে। তাই অল্প দিনে মুরগির ওজন বাড়াতে নতুন একটি মুরগির জাত উদ্ভাবন করা হয়। যাতে করে মানুষের চাহিদা মেটাতে পারে, এই জাতটির নাম হলো মাল্টি কালার টেবিল চিকেন বা এম সি টি সি বি।বিএল আর আইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আতাউর গনি রাব্বানী বলেছেন যে,
মাল্টি কালার টেবিল মুরগির জাতটি প্রতি দ্রুত মাংস উৎপাদন করতে পারে। এবং এমসিটিসি এই জাতটি দেশি মুরগির মত সুস্বাদু এবং গুণ রয়েছে। আমাদের দেশে মুরগির মাংসের চাহিদা পূরণ করতে এমসিটিসি এই জাতটি ঘরে ঘরে পালন করতে দেখা যাচ্ছে। এই মুরগির জাতটি মৃত্যুর হার অনেক কম এমসিটিসি মুরগির মৃত্যুর হার গবেষণা করে পাওয়া যায় ১.৫ শতাংশ। এই জাতটি দুই মাসে গড় ওজন 980 গ্রাম হয়ে থাকে এবং তিন মাসের ভেতর বাজারে বিক্রি করা যায়।

১০০ দেশি মুরগি পালনের খরচ

১০০ দেশি মুরগি পালন করতে ১০০ স্কয়ার ফিট একটি ঘরের প্রয়োজন হবে। বর্তমান বাজারে দেশি মুরগির বাচ্চার দাম ৫০ টাকা তাহলে ১০০ বাচ্চার দাম হলো ৫০০০ টাকা। একটি মুরগি তিন মাসে আড়াই কেজি খাদ্য খেয়ে থাকে। এক কেজি খাদ্যের দাম 50 টাকা দরে বিক্রি করা হয়, তাহলে ১০০ মুরগির জন্য খরচ হবে ১২৫০০ টাকা।
ঔষধ খরচ হবে এক হাজার টাকা আরো অন্যান্য খরচ হবে এক হাজার টাকা। মোট কথাই তিন মাসে দেশি মুরগির বাচ্চা পালন করতে মোট খরচ হবে বিশ হাজার টাকার মত। এই খরচটি বাজারের সাথে উঠানামা করবে।

100 দেশি মুরগি পালনে কত লাভ

আমরা যদি একশ মুরগি দিয়ে খামার তৈরি করতে চাই তাহলে আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে ১০০ মুরগির ভেতর থেকে পনেরোটা মুরগী বাদ দিতে হবে। এরপর আমরা হিসাব করবো কারণ ১০০ মুরগি থেকে তিন মাসে ১৫ টা মুরগী নষ্ট হয়ে যাবে। চলুন আমরা ৮৫ মুরগী নিয়ে হিসাব করি, তাহলে সঠিক একটা হিসাব পেয়ে যাব। তিন মাসে একটি দেশি মুরগি 300 টাকা দরে বিক্রি করা যায়,
আবার এর দাম কম বেশিও হতে পারে কারণ একাক অঞ্চলে এক এক রকম বিক্রি হতে পারে। আমরা যদি ৩০০ টাকা ধরে হিসাব করি তাহলে ৮৫ টা মুরগির দাম হলো ২৫ হাজার ৫০০ টাকা মুরগির পিছনে খরচ হয়েছে বিশ হাজার টাকা, বিশ হাজার টাকা বেশি হবে না বরং কম হবে তাহলে আমাদের তিন মাসে ১০০ মুরগিতে লাভ হচ্ছে 6 থেকে ৭ হাজার টাকার মত।

কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি

আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে চাকরি ছেড়ে মুরগির ব্যবসায় নেমে পড়ছে অনেকেই কারণ মুরগির ব্যব্সায় রয়েছে প্রচুর লাভ। আমরা বয়লার মুরগিকে বেশি পালন করতে দেখি কারন ব্রয়লার মুরগিতে লাভ অনেকটা বেশি থাকে এবং এক মাস পর পর বিক্রি করা যায় কিন্তু বয়লার মুরগিতে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। আপনি যদি কম ঝুঁকিতে মুরগির ব্যবসা চালু করতে চান
তাহলে দেশি মুরগি পালন করতে পারেন। কারণ দেশি মুরগি পালনের ঝুঁকি অনেক অনেক কম থাকে রোগ বালাই কম হয় এবং খাদ্য ঔষধ কম লাগে। তাই লাভ জনক ব্যবসার ভিতর দেশি মুরগির ব্যবসাটা দেখা যায় কম খরচে অনেক বেশি লাভ করা যায় আশা করি বুঝতে পেরেছেন কোন মুরগি পালনে লাভ বেশি।

কম খরচে মুরগির ঘর নির্মাণ

আপনি যদি দেশি মুরগি পালন করতে চান তাহলে বড় করে ঘর তৈরি না করে খাঁচার মতো ঘর তৈরি করে দেশি মুরগি পালন করতে পারেন এতে করে আপনার মুরগির রোগ বালাই কম হবে। এবং এই ঘরটি তৈরি করতে বাস এবং টিনের মাধ্যমে এই ঘরটি অল্প খরচে তৈরি করতে পারবেন। খাঁচার ভিতর দেশি মুরগি পালনের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
কারণ খাঁচার ভিতর একসাথে অনেকগুলো মুরগি থাকতে পারে না এতে করে একটা মুরগি যদি রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে সব মুরগির উপর প্রভাব ফেলে না। তাই কম কম খরচে মুরগির ঘর নির্মা ণ খাচাই সেরা।

মুরগির বাচ্চা পালনের নিয়ম

ডিমথেকে বের হওয়া মাত্রই বাচ্চাকে আলাদা করা ঠিক নয় কারণ বাচ্চার মার সাথে দুই চার ঘন্টা রেখে দিলে অনেক ভালো হয়। এখন বলব মুরগির বাচ্চা পালনের নিয়ম ও খাদ্য তালিকা এরপর মা সহ বাচ্চাকে একটি ঘরে চট পেড়ে রেখে দিন। বাচ্চা রাখার সাথে সাথে পানির পাত্র রাখার ব্যবস্থা করুন। প্রথম চার থেকে পাঁচ দিন সাধারণ পানি না দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এক লিটার পানিতে এক গ্রাম WS ভিটামিন দশ গ্রাম আখের গুড়া বা চিনি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
এই মিশ্রণটি তিন থেকে চারদিন খাওয়াবেন এবং খাদ্য হিসেবে প্রত্যেক বাচ্চার জন্য দুই থেকে পাঁচ গ্রাম সুষম খাবার দিতে হবে প্রথম সপ্তাহ জুড়ে ১০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। এবং প্রতি সপ্তাহে খাবারের পরিমাণ ৫ থেকে ৮ গ্রাম বাড়াতে হবে বাচ্চার বয়স যখন চার সপ্তাহ হবে তখন খুত, ঘুমের ঘোড়া, ভুট্টার গুড়া, ভাত ইত্যাদি সুষম খাবারের পাশাপাশি অল্প অল্প খাওয়াতে হবে।

তারপরে জায়গা পরিবর্তন করতে হবে এরপর বাচ্চা যখন একটু বড় হয়ে যাবে তখন খাঁচা কিংবা আপনার খামারে দিতে হবে। কিন্তু খাঁচায় মুরগি পালনের অনেক সুবিধা রয়েছে খাঁচার মুরগি সহজে নষ্ট হয় না যদি সঠিক নিয়মে তৈরি করতে পাড়েন। এই খাঁচা দুই ফুট উচু খাচার মোট জায়গা ৪ বর্গ ফুট, উচ্চতায় সামনের দিকে ২০ ইঞ্চি এবং মাথার দিকে ঢাকা কিন্তু একটু ঢালু থাকবে।

দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা

আমরা যদি দেশি মুরগি কিংবা অন্যান্য মুরগি পালন করতে চাই তাহলে আমাদের দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা সম্পর্কে জানা থাকা প্রয়োজন। কারণ মুরগির বাচ্চা মৃত্যুর হার অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাই আজকে আমরা আপনাদের জানাবো দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা।
  • প্রথম দিনে দিতে হবে লাইসোভিট বা গ্লুকোজ ব্যবহার করবেন।
  • তিন থেকে চার দিন টানা এমক্সসলিন খাওয়াবেন।
  • 4 থেকে পাঁচ দিনের ভেতরে আইবি+এনডি লাইভ ভ্যাক্সিন (রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিস) ব্যবহার করবেন।
  • ১০ থেকে ১২ দিনের ভিতরে গামবোরো লাইফ ভ্যাকসিন দিতে হবে।
  • ১২ থেকে ১৪ দিনের ভেতরে লিভার টনিক ভিটামিন খাওয়াতে হবে।
  • ১৮ থেকে ২২ দিনের ভেতরে গামবোরো লাইভ ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে হবে।
  • ২৪ থেকে ২৬ দিনের ভেতর এন্ডি লাইফ ভ্যাকসিন (রানীক্ষেত) ব্যবহার করতে হবে।
  • ৩০তম দিনে ফাউলপক্স ভ্যাকসিন ব্যবহার করবেন।
  • ৩৫ তম দিনে কৃমিনাশক ঔষধ ব্যবহার করবেন।
  • ৪৫ থেকে ৪৮ দিনের ভেতরে রানীক্ষেত লাইভ ভ্যাকসিন* (প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলে)
  • ৫০ থেকে নিয়মিত প্রোবায়োটিক+ভিটামিন+লিভার টনিক ব্যবহার করতে হবে।
যে কোন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন এতে করে আপনি আরো বিষয়ে পুরো ধারণা পেয়ে যাবেন।

কি খাওয়ালে মুরগির ওজন বাড়েঃ লেখকের মন্তব্য

আশা করি এই পুরো আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়ে ফেলেছেন। আপনি যদি এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে ইতিমধ্যে কি খাওয়ালে মুরগির ওজন বাড়ে এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটা পয়েন্ট সম্পর্কে পুর্ন ধারণা পেয়েছেন। আপনি যদি আমাদের এই পুরো বিষয়গুলো ফলো করে মুরগি পালন শুরু করেন
তাহলে এই সমস্ত পয়েন্টগুলো এপ্লাই করে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন। দেশি মুরগি পালনের ঝুঁকি অনেক কম থাকে তাই লাভবান হওয়া যায়। আপনার কাছে যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের সাথে শিয়ার করবেন ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মারিয়া অনলাইন ব্লকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url