ব্রয়লার মুরগির ১ থেকে বিক্রি পর্যন্ত সকল ঔষধ এবং খাদ্য তালিকা

ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা, ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ, ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার ঔষধ, ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা, ব্রয়লার মুরগির খাবার তালিকা, ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম, ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তৈরি উপাদান সমূহ। আপনি যদি এই সমস্ত বিষয়ে না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারেন
ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা
ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা

সূচীপত্রঃ ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা

এতে করে এই সমস্ত বিষয়ে পূর্ণ ধারণা পেয়ে যাবেন। আমরা এই প্রত্যেকটি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলাপ আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তাহলে চলুন বেশি সময় নষ্ট না করে কিছু সময় ধরে এই পুরো পোস্টটি পড়ে নেই।

ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা

এখন আমি আপনাদের মাঝে ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব। আমার এই নিয়মগুলো ফলো করলে ৩০ দিনের ঔষধের একটা ধারণা পেয়ে যাবেন সেই ধারণা মোতাবেক আপনারা আপনাদের ব্রয়লার মুরগিকে ৩০ দিন যাবত ঔষধ খাওয়াতে পারেন এতে আপনি ভাল একটি ফলাফল পেয়ে যাবেন।
  • দিন ১ঃ গ্লুকোজ+ভিটামিন সি (৫০ গ্রাম/লিটার)
  • দিন ২-৪ঃ অক্সিটেট্রাসাইক্লিন (১ গ্রাম/লিটার)
  • দিন ৫ঃ রাণিক্ষেত ভ্যাকসিন (১ মিলি/লিটার)
  • দিন ৬ঃ ওয়াটার এসিডিফায়ার (১ গ্রাম/৪ লিটার)
  • দিন ৭-৮ঃ ভিটামিন B1, B2, (যেমন: Thieving, Pithy WS ইত্যাদি)ভিটামিন ই ও সেলেনিয়াম (১ গ্রাম/লিটার)
  • দিন ৯ঃ সাদা পানি (২৪ ঘণ্টা)
  • দিন ১২ঃ ক্যালসিয়াম (১ গ্রাম/লিটার)
  • দিন ১৩ঃ ভিটামিন AD3E (১ মিলি/৪ লিটার)
  • দিন ১৭-১৮ঃ জিংক (যেমন: জিংক ভেট, জিংক প্লাস, জিসআপ ইত্যাদি) ২-৩ মিলি/লিটার)
  • দিন ২৩-২৪ঃ রাণিক্ষেত ভ্যাকসিন (১ মিলি/লিটার)
  • দিন ২৫ঃ সাদা পানি (২৪ ঘণ্টা)
  • দিন ২০-২২ঃ গ্রোথ প্রোমোটার (১ মিলি/লিটার)
  • দিন ২৭-২৯ঃ লিকুইড এনজাইম (১ মিলি/লিটার)
  • দিন ৩০ঃ গ্রোথ প্রোমোটার (১ মিলি/লিটার)
এই ঔষধের তালিকাটি শুধুমাত্র একটি নির্দেশিকা। আপনার এলাকার আবহাওয়া, মুরগির স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ঔষধের পরিমাণ এবং সময় পরিবর্তন হতে পারে। তাই, একজন অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকের বা পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ প্রদান করা উচিত। এখন আমি আপনাদের জানাবো ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে এবং সময় ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। আপনি যদি এই সকল বিষয়ে জানতে চান তাহলে নিচের প্যারাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিতে পারেন।
ব্রয়লার মুরগির ঔষধ খাওয়ানোর নিয়মঃ
  • ঔষধ প্রদানের আগে পানি ভালোভাবে ঠান্ডা করে নিন।
  • ঔষধ প্রদানের আগে পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
  • ঔষধ প্রদানের সময় মুরগির খাবার বন্ধ রাখুন।
  • ঔষধ প্রদানের পর মুরগিকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে।
ঔষধের পরিমাণ নির্বাচনঃ

ঔষধের পরিমাণ মুরগির বয়স এবং ওজনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ১ লিটার পানির জন্য ১ গ্রাম ঔষধ প্রয়োজন হয়। তবে, কিছু ঔষধের জন্য এর চেয়ে বেশি বা কম পরিমাণ প্রয়োজন হতে পারে। তাই, ঔষধের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য একজন অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসক বা পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এবং আপনারা খেয়াল করলে দেখতে পারবেন যে ঔষুধের গায়ে লেখা আছে কত লিটার পানিতে কত গ্রাম ঔষধ দিতে হবে আপনি চাইলে সেই মোতাবেক ঔষধ খাওয়াতে পারেন।

ঔষধ প্রদানের সময়ঃ

ঔষধ প্রদানের সময় মুরগির স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখুন। যদি কোন মুরগি অসুস্থ দেখায়, তাহলে তাকে আলাদা করে রাখুন এবং একজন পশু চিকিৎসক কে দেখান। এবং তার সাথে পরামর্শ করে সেই মোতাবেক ঔষধ খাওয়াতে পারেন। এছাড়া যদি আপনার আশেপাশে কোন ব্রয়লার ফার্ম থাকে তাহলে তাদের সাথেও পরামর্শ করে নিতে পারেন। এতে আপনি একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে যাবেন যা আপনার মুরগির রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে।

ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

ব্রয়লার মুরগিকে ঔষধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ কম বেশি সব ঔষদেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে তাই আপনি যদি ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আপনার বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে তাই আপনার মুরগিকে সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হবে।

ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ

ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এই ঔষধগুলো মূলত মুরগির খাদ্যের পরিপাক ও শোষণ প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং মুরগির বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে। ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত যে সমস্ত ঔষধ দেখা যায় সেই সকল ঔষধ নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

এবং ঔষধের সাথে আর কি কি যোগ করতে হবে মুরগির ওজন বাড়াতে সে বিষয়েও আপনাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

অ্যান্টিবায়োটিকঃ অ্যান্টিবায়োটিক মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, অ্যান্টিবায়োটিক মুরগির খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলোর শোষণকে উন্নত করে।

এমিনো অ্যাসিডঃ এমিনো অ্যাসিডের মধ্যে রয়েছে লিউসিন, ভ্যালাইন, আইসোলিউসিন, মেথিওনিন, ট্রিপটোফান, লাইসিন এবং ফিনিল্যাল্যানাইন। এসব অ্যামিনো অ্যাসিড মুরগির বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়।

হরমোনঃ হরমোনগুলির মধ্যে রয়েছে টেস্টোস্টেরন, গ্রোথ হরমোন এবং ইনসুলিন। টেস্টোস্টেরন মুরগির খাদ্য গ্রহণ এবং শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে। গ্রোথ হরমোন মুরগির বৃদ্ধি এবং বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। ইনসুলিন মুরগির শরীরে পুষ্টির শোষণকে উন্নত করে।

ভিটামিনঃ ভিটামিনগুলির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন A, D, E, K, B1, B2, B3, B5, B6, B7, B9 এবং B12। এসব ভিটামিন মুরগির স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

খনিজ পদার্থঃ খনিজ পদার্থের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, লোহা, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, কপার এবং সেলেনিয়াম। এসব খনিজ পদার্থ মুরগির স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

গ্রোথ প্রোমোটারঃ গ্রোথ প্রোমোটার মুরগির বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এগুলো মুরগির খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলোর শোষণকে উন্নত করে এবং মুরগির দেহে পেশী ও চর্বি তৈরিতে সহায়তা করে।

ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির জন্য ঔষধ প্রদানের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবেঃ
  • ওষুধের নির্দেশাবলী অনুসরণ করা উচিত।
  • ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • ওষুধের সাথে অন্যান্য ওষুধ বা খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত অথবা পুরাতন খামারির কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির জন্য ঔষধ ব্যবহারের পাশাপাশি, নিচে দেওয়া সকল বিষয় মেনে আপনার ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি করতে পারেন। যেমনঃ
  • মুরগির খাদ্যে পর্যাপ্ত আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রাখা উচিত।
  • মুরগির খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি রাখা প্রয়োজন।
  • মুরগির খামারে পর্যাপ্ত আলো এবং বায়ু চলাচল থাকতে হবে।
  • মুরগির খামারে রোগজীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা উচিত।
  • নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ব্রয়লার মুরগির খামার ও শেড নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ: ব্রয়লার মুরগির জন্য সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
আপনি যদি উপরে দেওয়া সকল বিষয়গুলো মানতে পারেন তাহলে আপনি দেখতে পাবেন যে ব্রয়লার মুরগি খুব দ্রুত ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে। এবং এই নিয়মগুলো ফলো করে অবশ্যই ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার ঔষধ

ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার ঔষধ হিসাবে যে সমস্ত ঔষধ বাজারে দেখতে পাওয়া যায় সেই সমস্ত ঔষধ নিয়ে আপনাদের কিছু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি এই নিয়মগুলো ফলো করলে আপনার মুরগির ঠান্ডা অবশ্যই কেটে যাবে তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি ঔষধ রয়েছে।

অ্যান্টিবায়োটিকঃ অ্যান্টিবায়োটিক মুরগির শরীরে সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।

ভিটামিন সিঃ ভিটামিন সি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম মুরগির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

জিংকঃ জিংক মুরগির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।

Broncho Vet- এই ঔষধটি মুরগির শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি মুরগির ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় কার্যকর।

ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার জন্য ঔষধ প্রদানের সময় যে সমস্ত বিষয়গুলোর সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন ওষুধের পরিমাণ ওষুধের প্রধানের সময় ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সুন্দর পরিবেশ এই সকল বিষয় সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হবে তাহলে দেখবেন অল্পদিনেই আপনার মুরগির ঠান্ডা কমে গিয়েছে।

ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকারও রয়েছে। যেমনঃ

রসুনঃ রসুন মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মুরগির খাবারে রসুন কুচি বা গুঁড়ো মিশিয়ে দিতে পারেন।

আদাঃ আদা মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মুরগির খাবারে আদা কুচি বা গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।

ভিটামিন সিঃ ভিটামিন সি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মুরগির খাবারে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমনঃ আম, কমলা, লেবু ইত্যাদি মিশিয়ে দিতে পারেন।

হলুদঃ হলুদ একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক যা মুরগির শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাগুলির চিকিৎসায় সাহায্য করে। মুরগির খাদ্যে হলুদ যোগ করুন বা মুরগিকে হলুদ থেঁতো করে খাওয়াতে পারেন।

লেবুঃ লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মুরগিকে লেবুর রস খাওয়ান বা মুরগির খাদ্যে লেবু যোগ করতে পারেন।

উষ্ণ পানীয়ঃ মুরগিকে উষ্ণ পানীয়, যেমন চা, দুধ বা পানি সরবরাহ করুন। এটি মুরগির শরীরকে উষ্ণ রাখতে এবং সর্দি, কাশি, ইত্যাদি রোগের  বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করবে।

এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলো ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডা প্রতিরোধ করতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে তাই আপনি এই ঘরোয়া নিয়ম ফলো করে আপনার মুরগিকে ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে পারেন। এর জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ এবং পুরাতন খামারির সাথে যোগাযোগ করে নিতে পারেন।

ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা

বয়লার মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা সম্পর্কে আমরা অনেকেই সঠিক তথ্য জানিনা তাই বয়লার মুরগিকে সাধারণত যে সমস্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হয় সেই সমস্ত ভ্যাকসিন নিয়ে আজকে আমি আপনাদের মাঝে আলাপ আলোচনা করব যে ভ্যাকসিনগুলো ব্যবহার করলে আপনার মুরগি স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।

মারেক্স ভ্যাকসিনঃ মারেক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মুরগির জন্য অত্যন্ত মারাত্মক। এই রোগে আক্রান্ত মুরগি মারা যায় বা উৎপাদন কমে যায়। মারেক্স ভ্যাকসিন মুরগিকে এই রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

রাণীক্ষেত ভ্যাকসিনঃ রাণীক্ষেত একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মুরগির ওজন এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ আক্রমণ করে ও অনেক মুরগি মারাও যেতে পারে। রাণীক্ষেত ভ্যাকসিন মুরগিকে এই রোগ গুলো থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

গামবোরো ভ্যাকসিনঃ গামবোরো একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মুরগির যা বিভিন্ন রোগের দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং অনেক মুরগি মারাও জেতে পারে। গামবোরো ভ্যাকসিন মুরগিকে এই রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

উপরে যে তিনটি ভ্যাকসিনের কথা বলা হয়েছে এর পাশাপাশি নিচে দেওয়া ভ্যাকসিন গুলোও আপনার প্রয়োজনে আসতে পারে। যেমনঃ ব্রংকাইটিস ভ্যাকসিন, বসন্ত ভ্যাকসিন, সালমোনেলা ভ্যাকসিন, করাইজা ভ্যাকসিন,

ব্রয়লার মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনগুলোর তালিকা স্থানীয় আবহাওয়া, রোগের প্রাদুর্ভাব এবং খামারের অবস্থার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হতে পারে তাই এই ভ্যাকসিনগুলো ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন প্রদানের সময় নির্বাচন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাই আমি আপনাদের নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করব যেগুলো মেনে আপনারা ভ্যাকসিন দিতে পারেন।

ভ্যাকসিনের মানঃ ভ্যাকসিনটি অবশ্যই মানসম্পন্ন হতে হবে।

ভ্যাকসিনের পরিমাণঃ ভ্যাকসিনের পরিমাণ মুরগির বয়স ও ওজনের উপর নির্ভর করে।

ভ্যাকসিন প্রদানের সময়ঃ ভ্যাকসিন প্রদানের সময় মুরগির স্বাস্থ্য ভালো হতে হবে।

ভ্যাকসিন প্রদানের পদ্ধতিঃ ভ্যাকসিন প্রদানের পদ্ধতি সঠিক হতে হবে।

ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে ব্রয়লার মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করা সম্ভব হয়। আপনি যদি আমাদের এই নিয়মগুলো ফলো করে ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন তাহলে আপনার বয়লার মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

ব্রয়লার মুরগির খাবার তালিকা

ব্রয়লার মুরগির খাবার তালিকা সম্পর্কে নিচে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে আপনি যদি এই নিয়ম ফলো করে ব্রয়লার মুরগিকে খাবার দিতে পারেন তাহলে আপনার ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। ব্রয়লার মুরগির জন্য সুষম খাবার প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রয়লার মুরগির খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ হতে হবে। যেমনঃ

প্রোটিনঃ ব্রয়লার মুরগির দেহ গঠনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। ব্রয়লার মুরগির খাবারে প্রোটিন এর পরিমাণ ১৫-১৮% হওয়া উচিত।

কার্বোহাইড্রেটঃ ব্রয়লার মুরগির শক্তির জন্য কার্বোহাইড্রেট অপরিহার্য। ব্রয়লার মুরগির খাবারে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ ৫০-৬০% হওয়া উচিত।

ফ্যাটঃ ব্রয়লার মুরগির দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য ফ্যাট অনেক প্রয়োজন। ব্রয়লার মুরগির খাবারে ফ্যাট এর পরিমাণ ৭-১০% হওয়া উচিত।

ভিটামিনঃ ভিটামিন মুরগির বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অন্যরকম ভূমিকা পালন করে। ব্রয়লার মুরগির খাবারে ভিটামিন এর পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকা উচিত।

খনিজ পদার্থঃ খনিজ পদার্থ মুরগির দেহের বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রমের জন্য অনেকভাবে উপকার করে থাকে। ব্রয়লার মুরগির খাবারে খনিজ পদার্থ এর পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রায় খাওয়াতে হবে।

আমিষঃ আমিষ হল ব্রয়লার মুরগির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। আমিষ মুরগির বৃদ্ধি, বিকাশ এবং মাংস উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়। আমিষের প্রধান উৎস হল সয়াবিন খৈল, তিলের খৈল, শুঁটকি মাছের গুঁড়া, রক্তের গুঁড়া ইত্যাদি।

শর্করাঃ শর্করা মুরগির শক্তির প্রধান উৎস। শর্করার প্রধান উৎস হল গম, ভুট্টা, চাল, চালের কুড়া ইত্যাদি।

স্নেহঃ স্নেহ মুরগির শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, কোষের গঠন এবং হরমোন সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয়। স্নেহের প্রধান উৎস হল সয়াবিন তেল, তিলের তেল, পাম তেল ইত্যাদি।

এই খাদ্যগুলো খাওয়ানোর সময় অবশ্যই খাবারের মান এবং খাবারের সঠিক পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। কারণ খাবার পরিমাণের চেয়ে বেশি খাওয়ালে ব্রয়লার মুরগির অনেক ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। তাই ব্রয়লার মুরগিকে খাবার দেওয়ার সময় অবশ্যই খাবারের মান এবং পরিমাণের দিকে নজর রাখতে হবে।

ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম

২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম বিভাগে ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম ৫০ কেজি প্রতি বস্তা ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৮৫০ টাকা। গত এক বছরে খাবারের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০%। মুরগির খাবারের দাম বাড়ায় খামারির খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে মুরগির দামও বেড়েছে।

খামারিদের দাবি, ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম কমিয়ে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে আনতে হবে এবং খাদ্যের মান বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়াও, লেয়ার সোনালীসহ অন্যান্য মুরগির খাদ্যের দাম ৫০ কেজি প্রতি বস্তা ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে আনতে হবে।

মুরগির খাবারের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খামারিরা বলছেন, মুরগির খাবারের প্রধান উপাদান ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম বাড়ায় খাবারের দাম বেড়েছে। এছাড়াও, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানিকৃত ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম আরও বেড়েছে।খাবারের দাম বাড়ায় মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

অনেক খামারি খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। এতে মুরগির সরবরাহ কমে যাওয়ায় মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ যে টাকা দিয়ে খাদ্য এবং ঔষধ সরবরাহ করা হয় সেক্ষেত্রে বয়লার মুরগি বিক্রির সময় দেখা যায় যে পরিশ্রম করা হয় সেই পরিশ্রমের টাকা তারা পায় না সেজন্য তারা বিভিন্ন ধরনের সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তৈরির উপাদান সমূহ

বয়লার মুরগির খাদ্য তৈরির উপাদান সমূহ নিচে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে আপনি যদি এই বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে চান তাহলে নিচে থাকা সমস্ত তথ্য সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

শর্করাঃ ব্রয়লার মুরগির শক্তির জন্য শর্করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রয়লার মুরগির খাবারে শর্করার পরিমাণ ৫০-৬০% হওয়া উচিত। শর্করার উৎস হিসেবে ভুট্টা, চাল, গম, গমের ভুসি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

প্রোটিনঃ ব্রয়লার মুরগির দেহ গঠনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। ব্রয়লার মুরগির খাবারে প্রোটিন এর পরিমাণ ১৫-১৮% হওয়া উচিত। প্রোটিনের উৎস হিসেবে সয়াবিন খৈল, তিলের খৈল, মাছের গুঁড়া, রক্তের গুঁড়া, ডিমের খোসা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

ফ্যাটঃ ব্রয়লার মুরগির দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য ফ্যাট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ব্রয়লার মুরগির খাবারে ফ্যাট এর পরিমাণ ৭-১০% হওয়া উচিত। ফ্যাটের উৎস হিসেবে সয়াবিন তেল, তিলের তেল, ক্যানারি বীজের তেল, ডিমের কুসুম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

ভিটামিনঃ ভিটামিন মুরগির বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য। ব্রয়লার মুরগির খাবারে ভিটামিন এর পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকা উচিত। ভিটামিনের উৎস হিসেবে ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স ব্যবহার করা হয়।

খনিজ পদার্থঃ খনিজ পদার্থ মুরগির দেহের বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রমের জন্য অন্যরকম ভূমিকা পালন করে। ব্রয়লার মুরগির খাবারে খনিজ পদার্থ এর পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকা উচিত। খনিজ পদার্থের উৎস হিসেবে খাদ্য লবণ, চুনাপাথর, ঝিনুক খোসা চূর্ণ, ডিমের খোসা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।


ব্রয়লার মুরগির খাবার তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তৈরির মেশিন রয়েছে। এই মেশিনগুলো ব্যবহার করে দ্রুত ও সহজে মানসম্পন্ন খাবার তৈরি করা যায় খুব অল্প সময়ের ভেতরে। আপনার ব্রয়লার মুরগির খামার যদি অনেক বড় হয়ে থাকে তাহলে খাদ্য তৈরীর মেশিন দ্বারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভালো মানের খাদ্য তৈরি করতে পারেন।

ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা শেষ কথা

বয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা সহ আরো বিভিন্ন ট্রপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে ইতিমধ্যে আপনি এই সমস্ত সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের এই পোষ্টে যদি আপনার কোন কাজে লেগে থাকে

কিংবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং আমাদের এই পোস্ট থেকে যদি কোন কিছু বুঝতে কোন ধরনের সমস্যা মনে হয় তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন এতে করে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মারিয়া অনলাইন ব্লকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url