কদবেলের উপকারিতা ও অপকারিতা - কদবেলের পুষ্টিগুণ
ডায়াবেটিস রোগীরা কি তরমুজ খেতে পারবে জানতে ক্লিক করুনকদবেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে না জানলেই নয় কারণ আমাদের বসতবাড়িতে কিংবা গ্রাম অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কদবেলের গাছ দেখা যায়। কদবেল সাধারণত আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফল পাকা শুরু করে এবং কদবেল কমবেশি সারা বছরই ফল দিয়ে থাকে। আজকে আপনাদের জানাবো কদবেলের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
এবং যে সমস্ত বিষয় না জানলেই নয় সেই বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব। যেমন পাকা কদবেল চেনার উপায়, কদবেল খাওয়ার নিয়ম, কদবেল কখন পাওয়া যায়, গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া যাবে কিনা, কদবেলের পুষ্টিগুণ এ সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আপনি যদি এই বিষয়গুলোর সঠিক তথ্য জানতে চান তাহলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিতে পারেন।
সূচীপত্রঃ কদবেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
কদবেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
কদবেলের উপকারিতা ও অপকারিতা, আমাদের সৃষ্টিকর্তা মানুষের প্রয়োজনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফলমূল সৃষ্টি করেছেন। এই পৃথিবীর সমস্ত ফল মানব দেহের জন্য অনেক উপকারে আসে এর ভিতরে একটি রয়েছে কদবেল। কদবেল গাছ আমাদের বসতবাড়িতে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায় কদবেল খেতে টক লাগে সেজন্য আমরা অনেকেই খেতে পছন্দ করি না।
কিন্তু কদবেলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানিনা। তাহলে চলুন আজকের পোস্ট থেকে জেনে নেওয়া যাক কদবেল এর উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি রয়েছে।
শিশুদের পেটের ব্যথাঃ দুধ এবং চিনি দিয়ে কদবেলের কচি পাতা মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুদের পেটের ব্যথা অনেক অংশে কমে যায়।
মেছতা ও ব্রণঃ মেছতা ও ব্রণ দূর করার জন্য কাঁচা কদবেলের রস করে মুখে নিয়মিত মাখলে মেছতা ও ব্রণ দ্রুত কমতে শুরু করে।
আমাশা এবং কোষ্ঠবদ্ধতাঃ নিয়মিত কদবেল খেলে দীর্ঘস্থায়ী আমাশা এবং কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করতে সাহায্য করে অল্প দিনে।
হরমোনঃ মহিলারা নিয়মিত কদবেল খেলে হরমোনের অভাব এমনকি স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার থেকে দূ্রে থাকে।
কোলেস্টেরলঃ নিয়মিত কদবেল খেলে কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
যকৃত ও হৃদপিণ্ডেরঃ নিয়মিত কদবেল খাওয়ার কারণে যকৃত ও হৃদপিন্ড সুস্থ ও সবল থাকে।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ নিয়মিত কদবেল খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং স্নায়ুর শক্তি যোগাতে
সাহায্য করে।
কিডনিঃ নিয়মিত কদবেল খেলে কিডনি সুস্থ এবং সবল রাখতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিসঃ যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত কদবেল খেতে পারেন কারণ কদবেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারে আসে।
রক্ত পরিষ্কারঃ আপনি যদি প্রতিদিন একটি করে কদবেল খেতে পারেন তাহলে বুক ধরফর সহ রক্তের নিম্নচাপ এবং রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।
ম্যালেরিয়াঃ কদবেলের ছাল পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়া রোগ দূর হয়ে যায় কারণ এতে রয়েছে ট্যানিন এবং অ্যালকালয়েড।
আরো পড়ুনঃ কিডনি রোগী কি তরমুজ খেতে পারবে
পিত্তরোগঃ কদবেলের কচি পাতার রস দুধ মিছরি একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে ছোট ছেলে মেয়েদের পেটের অসুখ এবং পিত্তরোগ দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের উপকার হয়ে থাকে কদবেলে যেমন আলসার, হাঁপানী, চোখ ওঠা, গলা ব্যাথা, লিউকোরিয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের ঔষধ বলে চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়ে থাকে। আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে কদবেল পেতে পারেন তাহলে এই সমস্ত রোগের হাত থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে কদবেল।
অপকারিতা
গবেষণায় দেখা গিয়েছে কদবেলে তেমন কোন অপকারিতা কিংবা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু আপনি যদি পরিমাণ এর চেয়ে বেশি খেয়ে থাকেন তাহলে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের সমস্যা। আমরা অনেকেই জানি যে কোনো ফল বেশি খাওয়া উচিত নয় এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনি যদি অতিরিক্ত কদবেল খেতে থাকেন তাহলে যে সমস্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে সেগুলি হল।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খেলে কি হয়
কোষ্ঠকাঠিন্য, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, এলার্জি প্রতিক্রিয়া আপনি যদি অতিরিক্ত কদবেল খেতে থাকেন তাহলে এই তিনটি সমস্যা অতি দ্রুত দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত কদবেল খাওয়া থেকে বিরত থাকায় বেটার হবে। কারণ আপনি যদি কদবেল পরিমাণ মত খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা দেখা দিবে যা দেখলে আপনি নিজেই চমকে যাবেন।
যাদের জন্য কদবেল না খাওয়াই ভালো হবে
তোমরা সবাই অতিরিক্ত কদবেল খাওয়া থেকে বিরত থাকবো এরপরেও কদবেল যাদের জন্য না খাওয়াই বেটার হবে। থাইরয়েড সমস্যা, গর্ভবতী, বদহজমের সমস্যা, বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলা যাদের এই সমস্ত সমস্যা রয়েছে তারা সবাই কদবেল এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া যাবে কিনা
গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া যাবে কিনা, গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে কারণ অনেক গর্ভবতী মায়েরা মনে করেন যে গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া উচিত নয়। এতে সন্তানের ক্ষতি হতে পারে কিন্তু এই উত্তরটি সবার জন্য সঠিক নয়। কারণ আপনাকে দেখতে হবে যে গর্ভবতী হওয়ার আগে বেল খেলে কোন ধরনের সমস্যা হয়েছে কিনা।
আরো পড়ুনঃ কামরাঙ্গা খেলে কি ক্যান্সার হয়
যদি না হয়ে থাকে তাহলে গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমার সাজেশন হল গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন এতে ক্লিয়ার একটা ধারণা পেয়ে যাবেন যে বেলের শরবত আপনার খাওয়া যাবে কি যাবে না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া যাবে কিনা।
পাকা কদবেল চেনার উপায়
পাকা কদবেল চেনার উপায়, আমরা অনেকেই কদবেল খেতে পছন্দ করি কিন্তু বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে পাকা কদবেল চেনার কোন উপায় নেই। কিন্তু আজকে থেকে আপনাদের আর কোন টেনশন নেই কারণ এখন আপনাদের জানাবো কিভাবে পাকা কদবেল চিনা যায়। অনেকেই কাঁচা কদবেল পেরে সিদ্ধ করে তারপর বাজারে বিক্রি করে।
এ ধরনের কদবেল চেনার উপায় হল এটা উপর থেকে দেখতে সাদা সাদা লাগে এবং যে কদবেল গাছ পাকা হয় সেটি দেখতে উপর থেকে হালকা কালো কালো এবং ভিতরেও কালো হয়ে থাকে মনে হয় কদবেলটা পচে গেছে। কিন্তু আপনারা কদবেলের গ্রান দেখেই বুঝতে পারবেন যে কদবেলটি গাছপাকা এরপরেও আপনাদের সুবিধার্থে গাছ পাকা কদবেলের ছবি দিয়ে রাখবো।
কদবেল খাওয়ার নিয়ম
কদবেল খাওয়ার নিয়ম, আমরা অনেকেই কদবেলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা কদবেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে কদবেল আপনি বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন এতে কোন ধরনের সমস্যা হবে না। কদবেল ভর্তা করে, শালাদ তৈরি করে, আচার তৈরি করে, এছাড়াও আপনি বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন এতে কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে না।
আরো পড়ুনঃ করমচা ফল কিভাবে খায়
কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখতে হবে সেটি হল পরিমাণ কদবেল আপনি যখন খাবেন তখন অবশ্যই তার পরিমাণ মেপে পরিমাণ মতো খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে দেখবেন কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে না। কিন্তু আপনি যদি পরিমাণের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন এতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
কদবেল কখন পাওয়া যায়
কদবেল কখন পাওয়া যায়, কদবেল সাধারণত আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসে পাওয়া যায়। এই সময়ে কদবেল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। কদবেল গাছ সারা বছরই ফল ধরে, তবে আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসে ফল পাকে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে কদবেল প্রধানত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি জন্মে। এছাড়াও, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও কদবেল চাষ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ করমচা চাষ পদ্ধতি
কদবেল একটি টক স্বাদের ফল। কাঁচা কদবেল টক স্বাদের হয়, তবে পাকলে এর স্বাদ কিছুটা মিষ্টি হয়ে যায়। কদবেল বিভিন্নভাবে খাওয়া জেতে পারেন যেমন কাঁচা কদবেল চিনি বা গুড় দিয়ে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাকা কদবেল আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি, সালাদ, ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়। এছাড়াও, কদবেলের রসের শরবতও খুব সুস্বাদু হয়ে থাকে আপনার শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে কদবেলের সিজনে কদবেল খেতে পারেন।
কদবেলের পুষ্টিগুণ
কদবেলের পুষ্টিগুণ, কদবেল একটি পুষ্টিকর ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, এবং ফাইবার রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলে নিম্নলিখিত পুষ্টিগুণ রয়েছে। যেমনঃ
খাদ্যশক্তিঃ ৪৯ কিলোক্যালরি
প্রোটিনঃ ৩.৫ গ্রাম
শর্করাঃ ৮.৬ গ্রাম
চর্বিঃ ০.১ গ্রাম
ভিটামিন সিঃ ১৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১ঃ ০.০৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২ঃ ০.০৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৩ঃ ০.২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬ঃ ০.০৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৯ঃ ৪ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন ইঃ ০.১ মিলিগ্রাম
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগী কি কিসমিস খেতে পারবে
ভিটামিন কেঃ ১.২ মাইক্রোগ্রাম
ক্যালসিয়ামঃ ৫.৯ মিলিগ্রাম
আয়রনঃ ০.৬ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়ামঃ ১৮ মিলিগ্রাম
ফসফরাসঃ ১৪ মিলিগ্রাম
পটাশিয়ামঃ ১৮৭ মিলিগ্রাম
সোডিয়ামঃ ১ মিলিগ্রাম
জিঙ্কঃ ০.৪ মিলিগ্রাম
সেলেনিয়ামঃ ১.২ মাইক্রোগ্রাম
ফাইবারঃ ৫ গ্রাম
শেষ কথা
যদি আপনি এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে আমরা উপরে জানতে পেরেছি যে কদবেলের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি এবং এর সাথে মিল রেখে আরো কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারণা পেয়েছি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে কদবেল বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে যা বিভিন্ন ল্যাবে প্রমাণিত।
আরো পড়ুনঃ রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়
তাই আপনি যদি আপনার শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে দূরে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই কদবেল খেতে ভুলবেন না। আজকের মত এখানেই কথা শেষ করছি কথা হবে অন্য কোন ট্রফিকে সে পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
মারিয়া অনলাইন ব্লকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url