করমচা ফলের উপকারিতা - করমচা ফল কিভাবে খায়
চিনা বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জানতে ক্লিক করুনআজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে করমচা ফলের উপকারিতা নিয়ে আপনাদের অনেকের কাছেই এই ফলটি অপরিচিত হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি করমচা ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন তাহলে চমকে যাবেন। আপনাদের সুবিধার্থে একটি আর্টিকেলের ভিতরে করমচা ফলের বিভিন্ন টপিক নিয়ে আলোচনা করেছি যা আপনাদের নিত্য নতুন জীবনে প্রয়োজন হতে পারে।
তাহলে চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক যে, এই পুরো আর্টিকেলে কোন কোন ট্রপিকের উপরে সাজানো হয়েছে। করমচা খাওয়ার অপকারিতা, করমচা ফল কিভাবে খায়, গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার উপকারিতা, করমচার পুষ্টিগুণ, করমচা ফলের দাম, করমচা চাষ পদ্ধতি। আপনি যদি এই পুরো আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন তাহলে এই সমস্ত প্রশ্নের ক্লিয়ার একটি ধারণা পেয়ে যাবেন।
সূচীপত্রঃ করমচা ফলের উপকারিতা
করমচা ফলের উপকারিতা
করমচা ফলের উপকারিতা, করমচা আমাদের অনেকের কাছেই একটি অপরিচিত ফল কিন্তু করমচা অপরিচিত হলেও এর উপকারিতা বলে শেষ করার মত নয়। করমচা ফল শহর কিংবা গ্রামের বাজারে দেখা যায়। কিন্তু করমচা ফলটি অপরিচিত হওয়ার কারণে এর উপকারিতা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে থাকি অনেকেই।
করমচা ফল একটি মৌসুমী ফল এটি খেতে টক লাগে করমচা ফলটি গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। করমচা ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ দেখা যায় এবং পাকলে লাল রং ধারণ করে এই ফলটির প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণ দেখা যায়। এবং বিভিন্ন উপকারিতাও পাওয়া যায় করমচার পুষ্টিগুণগুলো হলো। ভিটামিন-সি, শর্করা, ভিটামিন-এ, রিবোফ্লাভিন,
প্রোটিন, আইইউ, নিয়াসিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, কপার, কার্বোহাইড্রেট, জলীয় রস, চর্বি, খনিজ, পটাশিয়াম। করমচা ফলে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকায় যাদের রক্তে পটাশনের মাত্রা বেশি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে করমচা ফল খাওয়া উচিত নয় এতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এই সমস্ত পুস্টি উপাদানের জন্য আমাদের দেহে যে সমস্ত উপকারিতা গুলো পাওয়া যায় সেগুলো হলো।
- মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
- চর্বি এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে।
- শরীরের রক্তক্ষরণ কমাতে সাহায্য করে।
- রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে।
- কিডনির রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- ডায়রিয়া সর্দি জ্বর কাশি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- কখনো কখনো কৃমিনাশক ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
- শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে।
- ভিটামিনের জন্য চোখকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখে।
- দাঁতের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে।
- ওজন কমায় অল্প দিনে।
- ডায়াবেটিস এবং হার্টের জন্য অন্যরকম ভূমিকা পালন করে।
- স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
আপনি যদি নিয়মিত করমচা ফল খেতে পারেন তাহলে এই সমস্ত সমস্যা থেকে আপনাকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে সেজন্য নিয়মিত করমচা ফল খাওয়ার প্রয়োজন হবে।
করমচা খাওয়ার অপকারিতা
করমচা খাওয়ার অপকারিতা, বিভিন্ন রিসার্চ করে জানতে পারলাম করমচা খাওয়ার কোন ধরনের অপকারিতা নেই। কিন্তু যদি পরিমাণের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন তাহলে এটি আপনার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় অপকারিতা দেখা দিতে পারে। আমরা সকলেই জানি কোন জিনিস অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়।
তাই আপনি যদি করমচা ফল পরিমাণ মত খেতে পারেন তাহলে অপকারিতার চেয়ে উপকার পাবেন। করমচা ফল অতিরিক্ত খেলে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে যেমন গ্যাস্ট্রিক, হজম সমস্যা, ত্বকের এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
করমচা ফল কিভাবে খায়
করমচা ফল কিভাবে খায়, করমচা ফল বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে কিন্তু কাঁচা ফল খাওয়ার সময় অবশ্যই সুন্দর করে পরিষ্কার করে নিবেন এরপর খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে চিবিয়ে খাবেন। এবং পাকা করমচা খাওয়ার সময় সুন্দর করে পরিষ্কার করে নিবেন ফলের ভিতরে থাকা শাঁস গুলো বের করে নিবেন এরপর খাওয়া শুরু করবেন।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
এছাড়াও আরো বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে যেমন করমচা ফল দিয়ে জ্যাম, জেলি, আচার, সালাদ, শরবত ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। করমচা ফলের পুষ্টিগুণগুলো গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার উপকারিতার সম্পর্কে যা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ করমচা ফলের ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
আরো পড়ুনঃ কাজু বাদামের দাম কত বাংলাদেশে
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোঃ করমচা ফলের ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর হৃদরোগ ও অন্যান্য হার্টের সমস্যার ঝুঁকি অনেক অংশে কমে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোঃ করমচা ফলের ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
দাঁত ও মাড়ি মজবুত হয়ঃ করমচা ফলের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁত ও মাড়ি মজবুত করে।
লিভার ও কিডনির সমস্যা দূর হয়ঃ করমচা ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভার ও কিডনির সমস্যা দূর করে।
গর্ভাবস্থায় করমচা ফল কাঁচা অবস্থায় খাওয়া ভালো। তবে আপনি চাইলে পাকা করমচা ফলও খেতে পারেন। করমচা ফল বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয় গর্ভাবস্থায়। প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করমচা ফল খাওয়া যেতে পারে কারন করমচা ফল একটি টক স্বাদের ফল। তাই গর্ভাবস্থায় করমচা ফল খাওয়ার সময় অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা হতে পারে।
সে জন্য করমচা ফল খাওয়ার পর পরই শুয়ে পড়বেন না। করমচা ফল খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করবেন। এতে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কমে যাবে। এছাড়াও, করমচা ফলের অ্যালার্জি থাকলে গর্ভাবস্থায় করমচা ফল খাওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
করমচার পুষ্টিগুণ
করমচার পুষ্টিগুণ, প্রতি ১০০ গ্রাম করমচা ফলের পুষ্টিগুণ নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- শক্তিঃ ৬২ কিলোক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেটঃ ১৪ গ্রাম
- প্রোটিনঃ ০.৫ গ্রাম
- ভিটামিন এঃ ৪০ আইইউ
- ভিটামিন সিঃ ৩৮ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লেভিনঃ ০.১ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিনঃ ০.২ মিলিগ্রাম
- আয়রনঃ ১.৩ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়ামঃ ১৬ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়ামঃ ২৬০ মিলিগ্রাম
- কপারঃ ০.২ মিলিগ্রাম
করমচা ফলের দাম
করমচা ফলের দাম, আপনারা এখন অনেকেই চিন্তা করছেন যে যেহেতু করমচা ফলের এত পুষ্টিগুণ এবং এত উপকারিতা তাহলে তো এই ফলটি খেয়ে দেখতে হয়। কিন্তু আমরা তো অনেকেই জানিনা যে এই ফলের সঠিক দাম কত। চিন্তা করার কারণ নেই এখন আপনাদের জানাবো করমচা ফলের সঠিক দাম সম্পর্কে। করমচা সাধারণত প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ পর্যন্ত হয়ে থাকে এটি বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিভিন্ন বাজারের ভিত্তিতে দাম কম বেশি হতে পারে।
করমচা চাষ পদ্ধতি
করমচা চাষ পদ্ধতি, করমচা একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। এটি বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় চাষ করা যায়। করমচা গাছটি কাঁটাযুক্ত এবং এর ফলগুলো ছোট, গোলাকার এবং লালচে রঙের হয়।
ভূমি নির্বাচনঃ করমচা চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি ভালো। মাটির পিএইচ মান ৬.০ থেকে ৭.০ এর মধ্যে হলে ভালো হয়।
জমি তৈরিঃ জমি ভালোভাবে চাষ করে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমিতে গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপণঃ করমচা চারা রোপণের জন্য ভালো জাতের ফলের গাছ থেকে কলম বা বীজ সংগ্রহ করতে হবে। কলম রোপণের জন্য ১ থেকে ২ বছর বয়সী কলম ব্যবহার করলে ভালো হবে। বীজ থেকে চারা রোপণের ক্ষেত্রে ফল পাওয়ার জন্য ৫ থেকে ৬ বছর অপেক্ষা করা লাগতে পারে।
চারা রোপণের দূরত্বঃ করমচা গাছের মধ্যে ৫ থেকে ৬ মিটার এবং সারি থেকে সারির মধ্যে ৬ থেকে ৭ মিটার দূরত্ব রাখতে হবে।
সার প্রয়োগঃ করমচা গাছের জন্য প্রতি বছর গোবর বা কম্পোস্ট সার, ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে পারেন এতে ফলন ভালো হবে।
সেচঃ করমচা গাছের জন্য নিয়মিত সেচ দিতে হবে। বিশেষ করে গাছে ফুল আসার সময় এবং ফল ধরার সময় বেশি সেচের প্রয়োজন হয়। কারণ এই সময় সেচ না দিলে ফলনে ক্ষতি হতে পারে।
আগাছা দমনঃ করমচা গাছের চারপাশে আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। করমচা গাছের পাতা ও ফলের পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। এছাড়াও করমচা গাছের কিছু রোগবালাই হতে পারে। পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের জন্য কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন কয়টা কাজু বাদাম খাওয়া উচিত
ফল সংগ্রহঃ করমচা ফলের মৌসুম মে থেকে জুলাই পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই সময়ে করমচা ফল পেকে যায়। পাকা করমচা ফল লালচে রঙের হয়ে থাকে।
ফলনঃ একটি করমচা গাছ থেকে প্রতি বছরে ১২ থেকে ২০ কেজি ফল পাওয়া সম্ভব হয়।
করমচা ফলের উপকারিতার শেষ কথা
আপনি যদি আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এবং এর সাথে করমচা ফলের উপকারিতা সহ বিভিন্ন ট্রাফিক এর উপরে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পেরেছেন। করমচা ফল আমরা অনেকেই খেতে পছন্দ করি না কিন্তু আপনি যদি বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকতে চান তাহলে করমচা খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। কারণ করমচা ফলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন।
আরো পড়ুনঃ ১ কেজি কাঠ বাদামের দাম কত
আপনি চাইলে এখন থেকে করমচা ফলের সিজনে বেশি না পারলেও কম করে হলেও খেয়ে দেখতে পারেন দেখবেন আপনার শরীরের বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটছে। যাই হোক আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে কমেন্ট করে জানাতে পারেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে করে আপনাদের সঠিক তথ্য দিতে পারি আল্লাহ হাফেজ।
মারিয়া অনলাইন ব্লকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url